আমিরাতের সাথে বাংলাদেশের উড়োজাহাজ চলাচল স্বাভাবিক না থাকায় আটকে পড়া যাত্রীরা ফিরতে পারছে না নিজ গন্তব্যে।
শিবলী আল সাদিক
করোনার প্রাদুর্ভাবে উড়োজাহাজ চলাচল স্বাভাবিক না থাকায় সংযুক্ত আরব আমিরাতে ভ্রমণ ভিসায় আসা অসংখ্য বাংলাদেশিসহ প্রবাসী বাংলাদেশীদের বিশাল একটি অংশ গন্তব্যে ফিরতে পারছে না ।
কবে নাগাদ উড়োজাহাজ চলাচল স্বাভাবিক হবে , কবে তারা দেশে ফিরতে পারবে, তা নিয়ে রয়েছে চরম অনিশ্চয়তায়।
মার্চে শুরু থেকে বিশ্বের বিভিন্ন দেশে করুণা ভাইরাসের সংক্রমণ ছড়িয়ে পড়লে গত ১৯ মার্চ থেকে আমিরাতের সাথে বাংলাদেশের বিমান যোগাযোগ বন্ধ হয়ে পড়ে। পাশাপাশি অন্যান্য উড়োজাহাজ সমূহ বন্ধ করে দেওয়া হয় ।
ফলে দেশে যেতে ইচ্ছুক প্রবাসী বাংলাদেশিরা সহ দেশটিতে ভ্রমণ করতে আসা যাত্রীরা ফিরতে পারেনি দেশে।
যেসব প্রবাসী বাংলাদেশিরা ছুটিতে অথবা বিভিন্ন কাজের তাগিদে দেশে গেছেন তারাও ফিরতে পারেনি আমিরাতে।
ফলে একদিকে কর্মহীন ও আর্থিক সংকটে দেশে যাওয়ার অপেক্ষায় রয়েছেন হাজার হাজার প্রবাসী বাংলাদেশিসহ ভ্রমণ ভিসায় আসা আটকা পড়া প্রবাসীরা। অপরদিকে বাংলাদেশে আটকা পড়ে আমিরাতে ফেরার অপেক্ষায় রয়েছেন কর্মস্থলে যোগদানের জন্য অসংখ্য প্রবাসী।
করোনা ভাইরাস সংক্রমণের পর জেলে থাকা বন্দি বাংলাদেশি ও মৃত ব্যক্তিদের লাশ নিয়ে সাতটি বিশেষ উড়োজাহাজ আমিরাত থেকে বাংলাদেশে গেছেন ইতিমধ্যে। এই সাতটি উড়োজাহাজে জরুরী ভাবে সাধারণ প্রবাসীদের মধ্যে প্রায় দেড় হাজারের মতো প্রবাসী বাংলাদেশি বাংলাদেশে যেতে পেরেছেন।
আগামী ৩০ মে বাংলাদেশ বিমানের একটি ড্রিমলাইনার ৭৮৭৮০০ বিমান দুবাই থেকে ২৬০ জন যাত্রী নিয়ে বাংলাদেশ যাবেন বলে দুবাই বাংলাদেশ বিমানের রিজিওনাল ম্যানেজার দিলীপ কুমার চৌধুরী জানিয়েছেন। তবে তিনি জানান এই বিমানের দায় দায়িত্বে বিমানের দুবাই অফিস বহন করছে না । সম্পূর্ণ বিষয়টি হ্যান্ডেলিং করছেন দুবাইস্থ বাংলাদেশ কনস্যুলেট । তিনি বলেন বিমানের ৭৮৭৮০০ ড্রিমলাইনার বিমানটি জাতিসংঘের শান্তিরক্ষা মিশনে যোগদানরত বাংলাদেশ সেনাবাহিনীর বিশেষ গ্রুপ নিয়ে সেন্ট্রাল আফ্রিকার বাঙ্গুই নামে একটি দেশে যাবেন।সেখান থেকে ফেরার পথে দুবাই হয়ে বাংলাদেশে ফিরবেন এই উড়োজাহাজ। বাংলাদেশ কনস্যুলেটের দিকনির্দেশনায় বাংলাদেশ বিমান অফিস দুবাই টিকেট সেইলিংয়ের দায়িত্ব পালন করলেও মূলত এই বিমানে কোন ক্যাটাগড়ির যাত্রী যাবেন তা নির্ধারণের ব্যাপারটি দেখভাল করছেন দুবাইস্থ বাংলাদেশ কনস্যুলেট।
এব্যাপারে বাংলাদেশ কনস্যুলেটের কন্সাল জেনারেল ইকবাল হোসেন খান এই প্রতিবেদককে জানান এই বিশেষ উড়োজাহাজটি পরিচালনার জন্য আমরা দায়িত্ব পালন করছি। কেননা করোনা ভাইরাস সংক্রমণের কারণে বাংলাদেশের সাথে বিমান যোগাযোগ বন্ধ থাকায় অসংখ্য নারী ও শিশু এদেশে আটকা পড়েছে । তাছাড়া ভ্রমণ ভিসায় আসা অসংখ্য যাত্রী এদেশে মানবেতর জীবনযাপন করছে । তাই বিষয়টিকে প্রাধান্য দিয়ে এই উড়োজাহাজ পরিচালনার জন্য আমরা বিমান কর্তৃপক্ষের সাথে কথা বলে বাংলাদেশ মিশনের পক্ষ থেকে দেখভাল করার দায়িত্ব নিয়েছি। এই বিশেষ উড়োজাহাজে ২৭২ জন জন যাত্রী বাংলাদেশে যাওয়ার সুযোগ থাকলেও ১২ জন ক্রু এক্সট্রা থাকায় ২৬০ জন যাত্রী যাওয়ার সুযোগ রয়েছে। ৩০ মে দুপুর ১ টায় দুবাই থেকে বাংলাদেশের গন্তব্যে উড়োজাহাজ ছেড়ে যাবে। এই বিমানে ভাড়া নির্ধারণ করা হয়েছে ১৯২০ দিরহাম। বিমান অফিস জানায় এই উড়োজাহাজে দেশে যাওয়ার জন্য যাত্রীদের প্রচন্ড চাপ রয়েছে। তবে কনস্যুলেটে যাচাই-বাছাইয়ের পর বিমান অফিসে টিকিট বুকিং করতে যাত্রীদের অনেক সময় লেগে যাচ্ছে। ফলে সিট বুকিং খুবই ধীর গতিতে হচ্ছে বলে বিমান অফিস জানিয়েছেন। অপর একটি সূত্র জানিয়েছেন বিমানের এই উড়োজাহাজটি জাহাজটি জাতিসংঘের ভাড়া করা উড়োজাহাজ। ঢাকা থেকে সেন্ট্রাল আফ্রিকা এবং আফ্রিকা থেকে ঢাকা পর্যন্ত ফ্লাইট পরিচালনার জন্য যাবতীয় খরচ জাতিসংঘ শান্তিরক্ষা মিশন বহন করেছে।উড়োজাহাজ চলাচল নীতিমালায় আট ঘণ্টা উড়োজাহাজ পরিচালনার পর বিরতি দিয়ে পুনরায় ফ্লাইট পরিচালনা করতে হয়। এইজন্য দুবাই আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরকে বিরতির জন্য বেছে নেন বিমান কর্তৃপক্ষ। এই সুযোগটি কাজে লাগিয়ে আমিরাতে আটকে পড়া যাত্রীদের মধ্য থেকে অতি জরুরী কিছু যাত্রীকে বাছাই করে এই উড়োজাহাজটির মাধ্যমে বাংলাদেশে পাঠানোর ব্যবস্থা করা হচ্ছে।
সচেতন যাত্রীদের দাবি বিমানটি আফ্রিকা থেকে দুবাইতে যাত্রা বিরতির পর পুনরায় খালি ফিরে যেত বাংলাদেশে। দুবাইতে অসংখ্য যাত্রী আটকা পড়ছে বলে এই উড়োজাহাজে নেওয়ার সুযোগ হয়েছে। কিন্তু এই সংকটকালে যাত্রীদের কাছ থেকে স্বাভাবিক ভাড়া আদায় না করে কেন মাত্রা অতিরিক্ত ভাড়া আদায় করা হচ্ছে সে জন্য সরকারের দৃষ্টি আকর্ষণ জরুরী বলে তারা দাবী করেন।